আমরা অনেকেই জানি যে, শরীরের বাড়তি ওজন ডায়াবেটিকস, উচ্চ রক্তচাপসহ আরো বহুবিধ রোগের সাথে সম্পর্কিত। তাই শরীরের বাড়তি ওজন কমানো নিয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকেন। আসুন জেনে নেয়া যাক কিছু নিয়ম, যা অনুসরণ করে আমরা আমাদের শরীরের বাড়তি ওজন কমিয়ে সুস্থ থাকতে পারি।
১. ওজন কমাতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর খাবার
প্রোটিন জাতীয় খাবার আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। প্রোটিন দুই ধরণের। প্রাণীজ প্রোটিন এবং উদ্ভিজ প্রোটিন। প্রাণীজ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলো হচ্ছে- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি। উদ্ভিজ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলো হচ্ছে- ছোলা,ডাল,বাদাম, কিশমিশ, খেজুর ইত্যাদি।
এছাড়া নিয়মিত প্রচুর পরিমানে শাক-সবজি এবং ফলমূল খেতে হবে। সকল ধরণের শাক-সবজি, ফলমূল মিনারেল এবং ভিটামিনের আদর্শ উৎস। তাছাড়া আঁশজাতীয় খাদ্য হওয়াতে ক্যান্সার কোষ ধ্বংসেও সহায়ক। ওজন কমাতে এই খাদ্যগুলো আদর্শ।
২. ওজন কমাতে যে খাবারগুলো বর্জনীয়
সকল ধরণের মিষ্টি জাতীয় খাবার ওজন বাড়াতে সহায়ক । বাইরে তৈরি সকল প্রকার ফাস্টফুড, এনার্জি ড্রিংকস, কোমল পানীয় এবং তৈলাক্ত খাবার (সিঙ্গারা, সমুচা, আলুর চপ, বেগুনী ইত্যাদি) অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
খাবার অল্প পরিমানে খেতে হবে এবং খাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো না করে ধীরে খেতে হবে। ওজন কমাতে চাইলে খাবারে ভাতের পরিমাণ কমিয়ে বেশী করে সবজি খেতে হবে।
৩. আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগার বা সিডার ভিনেগার হল ভেজানো আপেলের রস থেকে তৈরী ভিনেগার। এটি নিয়মিত পান করার অভ্যাস আপনাকে ওজন কমানোতে সহায়তা করবে। আপেল সিডার ভিনেগার পান করার নিয়ম হচ্ছে- প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেতে হবে। আপনি চাইলে সাথে লেবুর রসও মিশিয়ে নিতে পারেন।
৪. প্রচুর পরিমানে পানি পান করা
আমরা অনেকেই পানি পান করতে চাইনা অথবা এই ব্যাপারে উদাসীন। দৈনিক আমাদের দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। পানি আমাদের কিডনীকে সচল রাখে এবং ওজন কমায়। সাথে ব্লাক কফি এবং গ্রী টি খাওয়া যায় তবে অবশ্যই চিনি ছাড়া হতে হবে। গ্রী টিও ওজন কমাতে বিশেষ ভুমিকা রাখে।
৫. গ্রিন টি পান করা
ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি খুবই কার্যকর। নিয়মিত গ্রিন টি পানের অভ্যাস আপনার ওজনকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আনতে ভালো ভুমিকা রাখবে। গ্রিন টি পান করার চারটি উত্তম সময় হল- সকালে নাস্তার পরে, ব্যায়াম করার আগে, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ঘন্টা দুয়েক আগে, খাবারের আগে অথবা পরে। তবে খাবার গ্রহণের আগে অথবা পরেই পান না করে খাবার গ্রহণের ৪৫ মিনিট আগে অথবা খাবার গ্রহণের ৪৫ মিনিট পরে পান করা উত্তম।
৬. পর্যাপ্ত ঘুম
ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমাতে হবে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। দিনের বেলার ঘুম বর্জন করতে হবে, রাতে ১২ টার আগেই বিছানায় যাওয়া উত্তম।
৭. নিয়মিত শরীরচর্চা
সুস্থ থাকতে এবং ওজন কমাতে নিয়মিত শরীরচর্চার কোন বিকল্প নেই। অনেকেরই হয়তো জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করার সুযোগ হয়ে উঠে না। সেক্ষেত্রে নিয়ম করে দিনের যেকোন একটা সময় ঘরে হালকা ব্যায়াম অথবা ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘন্টা হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করা যেতে পারে।
৮. রোজা
রোজা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ওজন কমাতে খুবই কার্যকর। তাই বেশী পারা না গেলেও সপ্তাহে কমপক্ষে দুইটি (সোম এবং বৃহস্পতিবারে)রোজা রাখার অভ্যাস করা যেতে পারে। রোজা ওজন কমানোতে খুবই কার্যকর ।
ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। সকালের খাবার ৯টার আগে, দুপুরের খাবার ২টার আগে এবং রাতের খাবার ৯টার আগে খেয়ে নিতে হবে। রাতের খাবার পর কমপক্ষে পনের মিনিট হেঁটে নেয়ার অভ্যাস করতে হবে। যেকোন খাবার গ্রহণের আগে পানি পান করে নিতে হবে এবং খাবার মাঝখানে পানি পান না করাই উত্তম। এই অভ্যাসগুলো তৈরী করতে পারলে সহজেই ওজন কমানো সম্ভব।