করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার উপায়ঃ
করোনা ভাইরাস কিঃ
করোনা এর ধরণের সংক্রামক ভাইরাস। করোনার অনেক প্রজাতি আছে যার মধ্যে ছয় প্রজাতি মানুষের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। এখন নতুন ভাইরাসের কারণে করোনা ভাইরাসের মোট প্রজাতি হল সাতটি। ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই নতুন প্রজাতির করোনা ভাইরাসের আনুষ্ঠানিক নাম দেয় এনসিওভি-২০১৯ বা নভেল করোনা ভাইরাস। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটিকে বিশ্ব মহামারি ঘোষণা করেছে।
২০০২ সালে চীনে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স (সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামক ভাইরাসে ৮০৯৮ জন সংক্রমিত হয় এবং ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল যা এক ধরণের করোনা ভাইরাস ছিল।
করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থলঃ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান করছে, সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাসটি চীনের উহান শহরের একটি বাজার যেখানে সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হয় সেখান থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে।
বাজারটিতে অনেক জীবন্ত প্রাণী যেমন মুরগি, বাদুড়, খরগোশ, সাপ পাওয়া যেত যা করোনা ভাইরাসের উৎস হতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, চীনের হর্সশু নামের একপ্রকার বাদুড়ের সঙ্গে এই ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু সামুদ্রিক প্রাণী যেমন, বেলুগা তিমি করোনা ভাইরাস বহন করতে পারে।
করোনা ভাইরাসের লক্ষণসমূহঃ
জ্বর, কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষণ।এটি ফুসফুসে আক্রমণ করে। সাধারণত শুষ্ক কাশি ও জ্বরই প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়, পরে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যায় রুপান্তর নেয়। সাধারণত রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচ দিন সময় লাগে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ভাইরাসটির ইনকিউবেশন সময়কাল ১৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। কিন্তু অনেক গবেষকের মতে এর স্থায়িত্ব ২৪ দিনও স্থায়ী হতে পারে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি অসুস্থ না হয়েও সুস্থ মানুষের দেহে ভাইরাস সংক্রমিত করতে পারে। সাধারণ সর্দিজ্বর এবং ফ্লু’য়ের উপসর্গ কাছাকাছি হওয়ায় রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে জতিলতা তৈরী হতে পারে।
যেভাবে ছড়াতে পারে করোনা ভাইরাসঃ
১. বাস, ট্রেন, টেম্পু কিংবা অন্য যে কোন ধরণের লোকাল পরিবহন ব্যবহার করলে।
২. কর্মক্ষেত্র একই ডেস্ক এবং কম্পিউটার ব্যবহার করলেও ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
৩. বাজার, খেলাধুলার স্থান, সিনেমা হল এরকম জনসমাগমস্থল
৪. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা কলম এবং অন্যান্য উপকরনের
৫. বাড়ি কিংবা অফিসের লিফটের বাটনের মাধ্যম।
৬. টাকা-পয়সা এবং ধাতব মুদ্রার লেনদেনের কারণে।
৭. করমর্দন এবং কোলাকুলির মাধ্যমেও করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে।
৮. অনেকে ব্যবহার করার কারণে এটিএম বুথ থেকেও সংক্রমণ হতে পারে।
৯. আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি থেকে ছড়াতে পারে করোনা ভাইরাস।
করোনা ভাইরাস থেকে বেচে থাকার উপায়ঃ
আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক কিভাবে করোনা ভাইরাস বেঁচে থাকার উপায়গুলো-
১. জরুরী কাজ ব্যাতিত ঘরের বাইরে না যাওয়া।
২. অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা মানে একজন থেকে আরেকজন নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলা।
৩. কোন প্রয়োজনে বাইরে গেলেও অবশ্যই মাস্ক ব্যাবহার করা ।
৪. বাইরে থেকে বাসায় আসলে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া।
৫. মাংস, ডিম অথবা শাক-সবজি ভালোভাবে ধুয়ে রান্না করতে হবে।
৬. বাইরে থেকে বাসায় আসলে গোসল করে নেয়া।
৭. ময়লা কাপড় ভালোভাবে ধৌত করা এবং উচ্চ তাপমাত্রায় শুকিয়ে নেয়া।
৮. আপাতত করমর্দন এবং কোলাকুলি থেকে বিরত থাকাই উত্তম।
৯. প্রচুর পরিমানে ফলের রস এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা।
১০. অফিসে কাজ শুরু করার আগে আসবাবপত্র, কম্পিউটার, কিবোর্ড, মাউস ইত্যাদি পরিষ্কার করে নেয়া।
১১. হাসপাতালে কর্মরত সকল ডাক্তার, নার্সকে অবশ্যই পিপিই (পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট)পরিধান করে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে হবে।
উপরোক্ত সতর্কতা মেনে চললে আশা করা যায় আমরা করোনা ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকতে পারব। তারপরেও রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত IEDCR এ অথবা ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। IEDCR এ ২৪ ঘন্টা যোগাযোগের নাম্বার, 01944-333222
আজ এ পর্যন্তই। সকলকে ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য।
তথ্যসূত্রঃ বিবিসি বাংলা