২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পর ন্যাটো তালেবানকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ এবং একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সৃষ্টির লক্ষ্যে আফগানিস্তান আক্রমণ করে। এর প্রায় ২০ বছর পরে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে হটিয়ে তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করল।
তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে ৫০ কিলোমিটার উওরে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ বাগরাম বিমানঘাঁটিও দখল করে নিয়েছে যা গত ২০ বছর ধরে তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিদেশী সেনাদের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।বাগরাম ঘাঁটিতে ৫ হাজার যোদ্ধা বন্দি ছিল যাদের এটি দখলের পর মুক্তি দেয়া হয়।
বিবিসি জানিয়েছে, তালেবান যোদ্ধারা ঊর্ধ্বতন নেতাদের নির্দেশনা মেনে রাজধানীর সকল প্রবেশ পথ দখলে নেন। তালেবান নেতারা বলেন, শক্তি প্রয়োগ করে তারা রাজধানী শহর দখল করতে ইচ্ছুক নন। বিমানবন্দর, হাসপাতাল, ব্যাংক-বীমা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কাজকর্ম চলমান থাকবে এবং কোন জরুরি সরবরাহ কাজেও বাধা দেওয়া হবে না। বিদেশীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, চাইলে তারা চলে যেতে পারেন অথবা থাকতে চাইলে তালেবান কর্মকর্তাদের কাছে তাদের উপস্থিতি নিবন্ধন করাতে হবে ।
তালেবানের রাজনৈতিক মুখপাত্র সুহাইল শাহিন তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রবেশের পরই এক ঘোষণায় পুরো আফগানিস্তানে ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা করেন । তিনি বলেন, যারা আমাদের বিরুদ্ধে হামলায় সহযোগিতা করেছে ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের দরজা ওই সকল ব্যক্তিসহ সবার জন্য খোলা থাকবে ।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি ঘোষণা স্থানীয় টিভিতে প্রচারিত হয়েছে যাতে তিনি বলেছেন ‘শান্তিপূর্ণভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে’।
বার্তা সংস্থা এপি, একজন আফগান কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে তালেবান আলোচকরা এখন প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের দিকে যাচ্ছেন, এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। যদিও এ ব্যাপারে আফগান সরকারের কোন প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, আফগানিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন তালেবানের সিনিয়র নেতা মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার।
তালেবান যোদ্ধারা যখন কাবুল শহরের প্রবেশপথগুলো দখলে নিচ্ছে ঠিক সে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি এক জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়েছেন মার্কিন দূত জালমে খলিলজাদ এবং ন্যাটো জোটের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে।
এর আগে শনিবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক টিভি ভাষণে প্রেসিডেন্ট গানি বলেছিলেন, দেশ এখন গুরুতর বিপদের সম্মুখীন, তবে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীকে জোরদার করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে যতটুকু খবর পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে, কাবুল অভিমুখে তালেবান যোদ্ধাদের অগ্রাভিযানে তেমন কোন বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি বললেই চলে।
তালেবান যোদ্ধাদের পক্ষ থেকে কাবুলে আফগান প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ দখলে নেয়ার দাবী করা হয়েছে। এর পূর্বে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি দেশ ছেড়ে তাজিকিস্তান চলে গেছেন বলে চলে যান বলে কিছু রিপোর্টে বলা হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে আসলে কি পরিস্থিতি তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
আফগানিস্তান থেকে বিদেশী সৈন্যদের বিদায় ঘোষণার দেড় মাসেরও কম সময়ের ঝটিকা অভিযানে তালেবান যোদ্দারা প্রায় পুরো দেশের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করলো ।