রোজ শুক্রবার – ০৯/০৯/২০১৯
সন্ধ্যা ৬:০০টায় রয়েল মোড় বাস স্ট্যান্ড থেকে সৌদিয়া সিল্কি এসি বাসে করে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। আনুমানিক রাত নয়টার সময় মাওয়া ফেরিঘাটে সন্ধ্যার নাস্তা ডিম খিচুড়ি খাওয়া সম্পন্ন করি। এরপর ফেরি পার হয়ে আবার গন্তব্যে যাত্রা শুরু করি । রাত তিনটার সময় কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী জমজম হোটেলে সৌদিয়া কোম্পানির সৌজন্যে বুফে ডিনার করি।
রোজ শনিবার – ১০/০৯/২০১৯
সকাল ৮:০০টার দিকে চট্টগ্রাম দামপাড়া বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে সিএনজিতে করে দামপাড়া থেকে চট্টগ্রাম টার্মিনালে যাই।ঐখান থেকে পূরবী বাসে করে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা করি।দুপুর ১২:৩০ মিনিটে বান্দরবনে পৌঁছাই।। এরপর বাসস্ট্যান্ডের অপজিটে হিলভিউ হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে বান্দরবান সদরের বিখ্যাত হোটেল আমিরাবাদে লাঞ্চটা সেরে ফেলি ,এরপর লিংকন দাদার(নাম্বার নিচে দেওয়া থাকবে) ফোর হুইলার চাঁদের গাড়িতে করে ভ্রমণ শুরু করি।
ভ্রমণের স্থানঃ-
- স্বর্ণমন্দির
- মেঘলা
- রূপালী ঝর্ণা
- নীলাচল
ফিরে এসে সন্ধ্যায় নাস্তা করে রুমে এসে ফ্রেশ হই এবং বিশ্রাম নেই।ঘন্টা দেরেক বিশ্রাম নিয়ে শহর টা ঘুরে দেখি।রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে ভাই বন্ধুরা মিলে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দেই, এরপর যার যার মত ঘুমিয়ে পড়ি!!
রোজ রবিবার – ১১/০৯/২০১৯
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে, নাস্তা করে থানচির উদ্দেশ্যে চাঁদের গাড়িতে উঠে পড়ি।
থানচি যাওয়ার পথে যে স্পটগুলো ঘুরে দেখি।
ভ্রমণের স্থানঃ-
- শৈলপ্রপাত
- চিম্বুক
- নীলগীরি
দুপুরে আমরা থানচি পৌঁছে যাই। এবার আমাদের ঠিক করা গাইড মাট্রিন (নাম্বার নিচে দেওয়া থাকবে)সাথে যোগাযোগ করি এবং কাগজপত্র রেডি করে থানা ও বিজিবির অনুমতি নেই। এবার থানচি বাজারের সবথেকে ভালো টং মাং হা রেস্টুরেন্টে দুপুরের লাঞ্চ সেরে ফেলি।থানচি বাজার থেকে ট্রেকিং জুতা কিনি এবং বিজিবি থেকে লাইফ জ্যাকেট ভাড়া নেই,কারণ সেফটি ফার্স্ট। গাইডের ঠিক করা বোটে করে রওনা দেই রেমাক্রির উদ্দেশ্যে।এর মাঝে আমরা প্রত্যেকে তার পরিবারের সাথে কথা বলে নেই, কারণ আর কিছুদূর গেলে মোবাইলের নেটওয়ার্ক থাকবে না। টুরিস্টরা সবাই জানি থানচি পার হলে মোবাইল নেটওয়ার্ক থাকে না। এরপরই শুরু হয় আমাদের বর্ষাকালীন স্ট্রিম সাঙ্গু অভিযান, যার পদে পদে রয়েছে বিপদ এবং নৈসর্গিক পাহাড়ি সৌন্দর্য্য ও রোমান্সের ছোঁয়া। যা আমি এবং আমার ট্যুর-মেটরা কখনো ভুলতে পারব না। (মৃত্যু খুব কাছ থেকে দেখার স্বাদ পেয়েছি )
এরপর রেমাক্রি বাজারে নাফাখুম গেস্ট হাউসে আমরা রাত্রিযাপন করি। নাফাখুম গেস্ট হাউজ এর দাদারা খুব আন্তরিকও আতিথেয়তা পূর্ণ । রাতে রেমাক্রি বাজার ঘুরে দেখি।এবার শুরু হয় রাতভর বৃষ্টি যা আমাকে অনেক ভয় পাইয়ে দিয়েছিল, কারণ পাহাড়ি বৃষ্টি শুরু হলে লাগাতার কয়েকদিন চলমান থাকে। এরপর নাফাখুম রেস্ট হাউজে আমরা বন-মোরগ ও জুম চালের ভাত দিয়ে রাতের ডিনারটা সম্পন্ন করি।তারপর কপালে চিন্তার ভাঁজ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
রোজ সোমবার – ১২/০৯/২০১৯
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে, নাস্তা করে গাইডের পরামর্শমতো থানচির উদ্দেশ্যে রওনা করি । ফিরে আসার পথে অপরূপ সৌন্দর্য্যে ভরা প্রাকৃতিক ঝর্নায় সবাই গোসল করি। সৃষ্টিকর্তার প্রতি অসীম ধন্যবাদ জানিয়ে আমরা থানচিতে ফিরে আসতে পারি । এবং থানচিতে এসে “দি হোটেল ডিসকভারি” তে উঠি বা এন্ট্রি হই।তারপর দশ মিনিটের ভিতরে ফ্রেশ হয়ে থানচি ডিম পাহাড় ও লিলুক ঝর্না দেখতে বেরিয়ে পড়ি হোটেলের ম্যানেজারের সাথে। পাহাড়ি উঁচু-নিচু রাস্তা অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে পৌঁছে গেলাম ডিম পাহাড়ে। লিলুক ঝর্নায় কিছুক্ষণ ঝাপাঝাপি করে ফিরে আসি হোটেলে। তারপর ফ্রেশ হয়ে সবাই মিলে দুপুরের লাঞ্চ শেরে ফেলি । একটু ঘুম দিলাম সন্ধ্যা পর্যন্ত। এরপর রাতে আড্ডা দিলাম থানচি বাজারে। বর্ষাকালীন সাঙ্গু নদী উপভোগ করলাম থানচি ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে । এবার চলে গেলাম টং মাং হা রেস্টুরেন্টে, দুপুরে আগে থেকে অর্ডার দেওয়া বাম্বু বিরিয়ানি খাওয়ার উদ্দেশ্যে, হ্যাঁ আমরা রাতে বাম্বু বিরিয়ানি দিয়ে খাওয়াটা সম্পন্ন করলাম। অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম যার যার মত।
রোজ মঙ্গলবার – ১৩/০৯/২০১৯
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে, নাস্তা করে সবকিছু গুছিয়ে চাঁদের গাড়িতে করে বগালেকের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। রুমা বাজার গিয়ে গাইডের এর সাথে যোগাযোগ করি এবং সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় নিয়ম কাজগুলো সেরে ফেলি । রুমা বাজার থেকে রাতের জন্য বারবিকিউ এর মুরগি ও মশলাপাতি কিনে নেই। এবার বগালেক পৌঁছে সেনাবাহিনীকে রিপোর্টিং করে সিয়াম দিদির কটেজে উঠি ।কটেজ গুলো আসলেই সুন্দর,কটেজ গুলো দেখলে মনে হয় বাশ আর ছন দিয়ে বানানো পাহাড়ি জুম ঘর। এবার জামাকাপড় ছেড়ে চলে গেলাম লেকের পানিতে গোসল করতে। খানিকক্ষণ লেকের পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি করে, কটেজে গিয়ে ফ্রেশ হলাম। এরপর সিয়াম দিদির ডাইনিংএ দুপুরের লাঞ্চটা (পাহাড়ি খাবারের সাথে) সেরে ফেললাম। খাওয়া-দাওয়া টা সেরে লেকের পাশে পার্কে বসে আড্ডা দিলাম অনেকক্ষণ। এরপর সন্ধ্যার পরে সেনাবাহিনীদের ক্যান্টিনে গিয়ে ক্যালসিয়াম(খেতে অনেকটা হরলিক্স এর মত) পান করলাম। গাইডের ফোন পেয়ে চলে আসলাম সিয়াম দিদির কটেজের সামনে , দাদার আগে থেকে ম্যারিনেট করা মুরগির মাংস নিয়ে আসা হল, এবার শুরু হলো বারবিকিউ পার্টি। বারবিকিউ এর সাথে খাওয়ার জন্য আগে থেকে লুচির অর্ডার দেওয়া ছিল সেনাবাহিনীদের ক্যান্টিনে। রাত আনুমানিক দুইটা পর্যন্ত পার্টি চললো লেকের পাড়ে বসে। এরপর শুরু হল বৃষ্টি ঠাণ্ডা অনুভূতি নিয়ে,চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম সবাই।
রোজ বুধবার – ১৪/০৯/২০১৯
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হই,তখনো বৃষ্টি কমেনি নাস্তা করি গরম গরম খিচুড়ি আর ডিম ভাজি দিয়ে। হালকা বৃষ্টি কমলে গাইড কে সাথে (সেনা বাহিনীর অনুমতি) নিয়ে কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । কিছুদূর আসার পর আমরা যখন কিছুটা ক্লান্ত, পেয়ে গেলাম পাহাড়ি টং এর দোকান সেখানে সবাই পাহাড়ি লেবুর শরবত,কলা,কেক ইত্যাদি খাওয়া শেষ করে আবার যাত্রা শুরু পাহাড়ি উঁচু,নিচু, সমতল পথ চলতে চলতে একটি ঝর্ণা চোখে পড়ল , অনেক ছোট-বড় পাথর পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম সেই কাঙ্খিত চিংড়ি ঝর্নার পাদদেশে, তার সৌন্দর্যে হারিয়ে গেলাম নিজের আপন ভুবনে। কিছু ছবি স্মৃতির পাতায় রেখে যাত্রা শুরু করলাম গন্তব্যে। কিছুদুর যেতেই খাড়া পাহাড়ি পথ কষ্টকর মুহূর্ত শুরু হল দীর্ঘ এক ঘন্টা হাঁটার পর একটু চুরা মতো জায়গায় গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানে একটি টং এর দোকানে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে লেবুর শরবত পান করে যাত্রা শুরু করলাম। ঘন্টা দেড়েক পর পৌঁছে গেলাম দার্জিলিং পাড়ায় আরিয়ান দিদির টংঘরে, সবাই কিছু কেক কলা জল খেয়ে নিয়ে শুরু হলো কেওক্রাডং অভিযান । এবার আর 20-30 মিনিটের পথ, পৌঁছে গেলাম সেই বাংলাদেশের পঞ্চম সুউচ্চ পাহাড় কেওক্রাডং এর চূড়ায়। পৌঁছে সেনাবাহিনীর কাছে রিপোর্টিং সেরে “লালা মন্থন লালা” দাদার কটেজে উঠে পড়লাম। হালকা ফ্রেশ হয়েই কটেজের ডাইনিং এ দুপুরের লাঞ্চের জন্য বসলাম। ডিম আর ডাল দিয়ে দুপুরের লাঞ্চটা সেরে ফেললাম। অনেকটাই দুর্গম এলাকা এখানে খাবার পাওয়া যায় একটাই সৌভাগ্যের বিষয়। মোবাইল নেটওয়ার্ক খুব ভালো পাওয়া যায় না,নির্দিষ্ট পয়েন্টে কিছুটা পাওয়া যায়।এরপর মেঘের ভিতর বসে আড্ডা দিচ্ছি এবং হাত দিয়ে মেঘ ছোঁয়া যে অনুভূতি, সেটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমাদের কটেজটা ছিল নতুন কটেজ এবং পাহাড়ের শেষ সীমানায় এর জন্য আমরা বারান্দায় বসলেই মেঘের ভেতরে ডুবে যেতাম।
নিজ চোখে না দেখলে আসলে বিশ্বাস করতে পারতাম না,এটা মেঘ না অন্য কিছু!!
সন্ধ্যা থেকেই প্রচুর ঠান্ডা শুরু হয়ে গেছে, রাত যত গভীর হচ্ছে তত ঠান্ডার পরিমাণও বাড়ছে। এর মধ্যে আমরা সবাই কটেজের ডাইনিংয়ে গিয়ে বসলাম ওইখানটায় চারিপাশ আটকানো একটু গরম অনুভুতি হচ্ছে। ওইখানে একটি দোকান আছে যার যা ইচ্ছা সে সেটা খাচ্ছি আর ফোনগুলো চার্জে দিচ্ছি। বলতে ভুলে গেছি, এই কটেজে বিকাল ৫টা থেকে রাত ১২পর্যন্ত জেনারেটরের মধ্যমে বিদ্যুৎ চলে।এরপর রাত দশটার দিকে আমরা মুরগির মাংস দিয়ে রাতের খাবার টা সেরে ফেললাম। আর কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে কটেজে ফিরে লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম,কারণ আমরা খুব ক্লান্ত।
রোজ বৃহস্পতিবার – ১৫/০৯/২০১৯
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হই,সেনাবাহিনীর কাছে থেকে চেক আউট করে নেমে আসলাম দার্জিলিং পাড়ায় আরিয়ান দিদির পাহাড়ি দোকানে, আমাদের আগের দিন অর্ডার দেওয়া জুম চালের ভাত(দেখতে অনেকটা লালচে ), আলু ভর্তা, ঝাল পেঁয়াজ ভর্তা, ডাল,বাশ করল ও দিদির হাতের স্পেশাল বাম্বু চিকেন দিয়ে সকালের খাবার সম্পন্ন করি।
একটু রেস্ট নিয়ে বগালেকের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। নির্দিষ্ট সময়ে বগালেক পৌঁছে গেলাম।
সবাই খুব তাড়াতাড়ি গোসল করে জিনিসপত্র গুছিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে থেকে চেক আউট করে গাড়িতে উঠে পড়লাম গন্তব্য এখন আমাদের বান্দরবান ফেরার পালা।বান্দরবান পৌঁছে দুপুরে লাঞ্চ সেরে, একঘন্টা সবাইকে কেনাকাটার জন্য সময় দেয়া হলো।কেনাকাটা শেষে সবাই চট্টগ্রাম চলে আসার জন্য বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে পৌঁছালাম। সেখানে গিয়ে দেখি ঈদের ছুটি শেষ তাই কোন বাসে কোন টিকিট নাই , টিকিট না পেয়ে আমরা কাটা কাটা চট্টগ্রাম শহরে চলে আসলাম। এরপর একটি কম দামি হোটেলে রাত্রিযাপন করলাম, কারণ আমাদের পকেটের টাকা কমে আসছে। রাতে একটি নিরামিষ হোটেল থেকে রাত্রের খাবার সম্পন্ন করলাম। তারপর আমরা সবাই খুব খুব ক্লান্ত তাই বেশিক্ষণ আড্ডা না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
রোজ শুক্রবার – ১৬/০৮/২০১৯
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে, নাস্তা করে নিলাম। মনটা আজ সকলেরই খুব খারাপ কারণ আজ বাড়ি ফেরার পালা। সবাই গোসল করে ফ্রেশ হয়ে দুপুর একটার দিকে আমাদের ট্যুর ম্যানেজার মৃত্যুঞ্জয় দাদার বাসায় দাওয়াত খেতে গেলাম। দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে হালকা বিশ্রাম নিয়ে সবকিছু গুছিয়ে রেডি হয়ে, দামপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সৌদিয়ার নন এসি বাসে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। তারপর মাওয়া ঘাটে এসে রাতে ইলিশ ভাজি ও বেগুন ভাজা দিয়ে রাতের খাবারটা সম্পন্ন করলাম। এরপর ফেরি পার হয়ে আবার গন্তব্যে যাত্রা শুরু করলাম।
রোজ শনিবার – ১৭/০৮/২০১৯
সকালে সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ডে বাস থেকে নেমে যার যার গন্তব্যে ফিরে যাই।আর এভাবেই আরেকটি অসাধারন অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরের সমাপ্তি!! লেখাঃসুদীপ্ত